নেওলাইফের এমডি নুরুল আমিনকে ডি-স্যাব থেকে বহি:স্কার
রাকিব হাসান:
দূর্নীতি, অর্থ আত্মসাৎ ও প্রতারণার অভিযোগে নেওলাইফের এমডি নুরুল আমিনকে ডিরেক্ট সেলিং এসোসিয়েশন বাংলাদেশ থেকে বহি:স্কার করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
উল্লেখ্য, নেওলাইফ কোম্পানীর ক্রেতা-পরিবেশকগণ এই কোম্পানীর এমডি নুরুল আমিনের বিরুদ্ধে লিখিত ও মৌখিক অভিযোগ দায়ের করে।
তাদের অভিযোগের সত্যতা যাছাইয়ে দীর্ঘ ২ মাসে এসব বিষয়ে অনুসন্ধান করে ডি-স্যাব কতৃপক্ষ। প্রতিটি অভিযোগ ডি-স্যাব এর তদন্তে সত্য ও বস্তুনিষ্ঠ বলে প্রমাণিত হয়।যেকারণে ডি-স্যাব এর কার্যকরী কমিটি তার বিরুদ্ধে এই ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়।
এছাড়া, নুরুল আমিন নেটওয়ার্ক মার্কেটিং এর নাম ভাঙিয়ে কারো টাকা আত্মসাৎ বা প্রতারণা করলে এর দায় ডি-স্যাব কখনও নেবে না বলে জানিয়েছে এই সংগঠনের কর্মকর্তারা । বরং এই জাতীয় অপরাধীদের সম্পর্কে দেশের সকল নেটওয়ার্কারদের সজাগ ও সর্তক থাকার অনুরোধ জানিয়েছে ডি-স্যাব।ভবিষ্যতে যেকোনো কোম্পানীর দুর্নীতি-অনিয়মের বিরুদ্ধে সোচ্চার থেকে বাংলাদেশে নেটওযার্ক এর সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে ডিস্যাব বদ্ধ পরিকর। এ ব্যাপারে সকল কোম্পানীর ক্রেতা পরিবেশকসহ কোম্পানীর মালিকপক্ষের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন তারা।
ডি-স্যাবের তদন্তে নেওলাইফের এমডি নুরুল আমিনের দূর্নীতি, অনিয়ম, অর্থ আত্মসাৎ ও প্রতারণার যেসব বিষয় ধরা পড়েছে —
১. সার্ভার আপডেটের নামে বারবার ডিস্ট্রিবিউটরদের সাথে মিথ্যাচার করা ।
২. কোম্পানি আয়োজিত বিভিন্ন অনুষ্ঠানে নেওলাইফ কোম্পানী থেকে ৪০ টি গাড়ী দেয়া হয়েছে বলে উদ্বুদ্ধ করা হলেও তা সম্পূর্ণ মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে।তদন্তে দেখা যায়, কোম্পানিতে শর্ত সাপেক্ষে গাড়ি পুরস্কার হিসেবে পাওয়ার কথা ছিল মোট ৮ জনের। তবে বাস্তবে গাড়ী দেয়া হয়েছে মাত্র ১ টি।আর এই একটি গাড়ীকে ১ মাস ২ মাস করে পর্যায়ক্রমে ৪ জনের হাতবদল করে অভিনব কায়দায় প্রতারণা করা হয়েছে বলে জানিছেন ডিরেক্ট সেলিং এ্যাসোসিয়েশন কতৃপক্ষ। আরও জানা গেছে, মূলত কোম্পানী কাউকে গাড়ী দেয়নি এবং গাড়ীর টাকাও কেউ পায়নি। উল্টো যে একটি গাড়ী শোরুম থেকে নেয়া হয়েছিল তা উর্মি নামের একজন গ্রহকের চেক দিয়ে নেয়া হয়েছে।যা দৃশ্যত জালিয়াতি ও প্রতারণার শামিল।
৩. কোম্পানীর একাউন্ট বা পে আউটের কোনো সুষ্ঠ ব্যবস্থাপনা বলে ছিলো না।প্রত্যেকে ফিল্ডে ডলার বিক্রি করে ক্যাশ করেছে। এমনকি নেওলাইফ এর অফিস থেকে কোনো কমিশনও তাদের দেয়া হয়নি।মূলত গ্যাম্বেলিং কোম্পানীর মতো ডলার কেনা-বেচা করতে বাধ্য করা হয়েছে এই কোম্পানীর গ্রাহকদের।কেউ কোনো সেল না দিতে পারলে তার ডলারও ক্যাশ করাতে পারতো না বলে জানা গেছে। অথচ কোম্পানীর প্রতিটি প্রোগ্রামে বিকাশ, নগদ, ব্যাংক ও রকেটের মাধ্যমে পেমেন্টের কথা বলে মোটিভেশন দিলেও বাস্তবে এমন কোনো ব্যবস্থাপনাই ছিলো না।
৪. কোম্পানীর শুরু থেকে ইন্টারন্যাশনাল কোম্পানীর নাম ব্যবহার করেও প্রতারণা করেছে নুরুল আমিন।
৫. এমনকি বিভিন্ন সময়ে কৌশলে ডিস্ট্রিবিউটরদের ওয়ালেট থেকে কমিশন জিরো করে ফেলার মতো অনৈতিক ও গর্হিত কাজ করেছে নেওলাইফের এমডি নুরুল আমিন।
৬. গত ৫ বছরে কোম্পানীর পক্ষ থেকে কোনো ভ্যাট-ট্যাক্স দেয়া হয়নি রাষ্ট্রীয় কোষাগারে। অথচ ডিস্ট্রিবিউটরদের কমিশন থেকে ১০ শতাংশ করে কেটে নেয়া হয়েছে।
৭. কোম্পানীর বিভিন্ন অনুষ্ঠানে নর্তকী ও পতিতাদের দিয়ে উপস্থিত গ্রাহকদের বিনোদনের নামে অশ্লীলতার চর্চা করা হয়েছে। যা নেটওয়ার্ক কোম্পানীগুলোর প্রতি মানুষের বিরূপ মনোভাব তেরি করেছে। উল্লেখ্য, এই সংক্রান্ত একটি ভিডিও ক্লিপস ইতোমধ্যে ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে।
৮. ৩৭ জন স্টকিস্ট থেকে ৫ লাখ করে নেয়া হলেও পণ্য দেয়া হয়েছে ৩০ শতাংশ। বাকী ৭০ শতাংশ টাকা অর্থাৎ ১ কোটি ২৯ লাখ ৫০ হাজার টাকার পণ্য বা টাকার কোনো হিসাব দেয়া হয় নাই স্টকিস্টদের। এই টাকা নুরুল আমিন ব্যক্তিগতভাবে নিয়ে নিয়েছে বলেও ডিস্যাব এর তদন্তে উঠে এসেছে।
৯. গত ১৪ মাসে কোম্পানীটির কোটি কোটি টাকা সেল হলেও খুব কম মানুষই পণ্য পেয়েছে।উপরন্তু বাই ব্যাক পলিসির কথা বলে গেম খেলে অফিসের খাতায় সিগনেচার নিয়ে সবাই পণ্য পেয়েছে এই মর্মে মিথ্যা অঙ্গিকার দিতে বাধ্য করার অভিযোগটিও সত্য বলে প্রমাণিত হয়েছে।
১০. গত ৪ মাস ধরে সার্ভার আপডেটের নামে সাইট বন্ধ রাখার অভিযোগটি সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত। উল্লেখ্য, সার্ভার আপডেট করা হয়নি বরং ম্যানুয়ালি লোকজনের পদবী পরিবর্তন করা হয়েছে।যা বেআইনি ও অসঙ্গতিপূর্ণ।
১১. ডায়মন্ড সেট আপের নামে গত ৪/৫ মাসে ফিল্ড থেকে কয়েক কোটি টাকা নেয়া হয়েছে। কারো থেকে ৮ লাখ, কারো থেকে ৪ লাখ আবার কারো কাছ থেকে মাত্র ১০ হাজার টাকা নিয়েও তাকে পণ্য বিক্রি ছাড়াই ম্যানুয়ালি ডায়মন্ড বানিয়ে দেয়া হয়েছে। ৬/৭শ লোকের কাছে ডায়মন্ড সেটআপ সেল করা হয়েছে যা দেশের প্রচলিত আইন পরিপন্থি।
এ বিষয়ে ডিস্যাব অথরিটি প্রতিক্ষণকে বলেন,‘নেওলাইফের এমডি নুরুল আমিনকে বহুবার সতর্ক করার পরও সে নিজের ভুলগুলো সংশোধন করেনি। এজন্য আমরা সাধারণ মানুষগুলোকে এই প্রতারকের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য কঠোর হতে বাধ্য হয়েছি।যেন অন্য প্রতিষ্ঠানগুলো দুর্নীতিমুক্ত থাকতে পারে’।
প্রতিক্ষণ/এডি/রাকিব হাসান